১। রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েটঃ
"Never was a story of love nor woe that of Juliet and her Romeo." সবাই-ই মেনে থাকেন এই জুটিই, প্রেমের ইতিহাস বা গল্পগুলোর মধ্যে সর্বাধিক প্রচারিত বা সবচেয়ে বেশী বিখ্যাত। যেন ভালোবাসার অপর নাম রমিও-জুলিয়েট। বিশ্ব বিখ্যাত ইংরেজ লেখক, William Shakespeare এর কালজয়ী ট্রাজেডি হল এই “Romeo and Juliet!” দুটি ভিন্ন পরিবারের পূর্ববর্তী রেষারেষি, বংশীয় অহংকার ভেদ করে দুজন তরুণতরুণীর প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়া। পরবর্তী তে পরিবারের বাঁধা, ভয় দেখানো, নানা মাসসিক সংশয়- টানাপোড়ন সব উপেক্ষা করে নানা নাটকীয়তার মাঝে তাদের বিয়ে করা। এবং সবশেষে, তথ্যগত ভুলবোঝা বুঝি জনিত কারণে বিষপানে দুজনের মৃত্যু!! সব মিলিয়েই, রোমিও- জুলিয়েট কাহিনী হয়ে গেছে অমর এক প্রেম গাঁথা! তাই পৃথিবীতে যখনই প্রেমের জন্য ত্যাগ- তিতিক্ষার কথা বলা হয়, সবার আগেই উঠে আসে এই যুগলের নাম! যুগে যুগে অসংখ্য নাটক, সিনেমা বানানো হয়েছে এই “timeless love” নিয়ে।
২। এন্টোনি অ্যান্ড ক্লিওপার্টাঃ
অনেকের মধ্যে অন্যতম আরেকটি অমর প্রেমগাঁথার নাম, মার্ক এন্টোনি- ক্লিওপার্টা। ঐতিহাসিক এবং একই সাথে দারুণ নাটকীয় এই প্রেম হয়, অনিন্দ সুন্দরী মিসরীয় রাণী ক্লিওপার্টা আর তাঁর প্রধান সেনাপতি এন্টোনির মাঝে। শক্তিশালী এবং ঐতিহাসিক চরিত্রদুটির মাঝের এই অমর প্রেম আকর্ষণীয়ভাবে আমাদের কাছে তুলে এনেছিলেন Shakespeare তাঁর যাদুকরী লিখনির মাধ্যমে। রাজকীয় ঘাত-প্রতিঘাত, জয়পরাজয় উপেক্ষা করে তাঁরা বিয়ে করেছিলেন। পরবর্তীতে রোমান দের সাথে যুদ্ধরত এন্টোনির মনোবল ভাঙার জন্য, তাঁকে যুদ্ধের ময়দানে মিথ্যে সংবাদ শুনিয়েছিলেন যে, শত্রুরা ক্লিওপার্টাকে হত্যা করেছে। তারপর এন্টোনি নিজ ছুরিতে মৃত্যুবরণ করেন, অন্যদিকে এন্টোনির মৃত্যুসংবাদ শুনে মিসরীয় রাণী ক্লিওপার্টাও নিজ ছুরিতে আত্মহত্যা করেন। Shakespeare তাঁদের জন্য বলেছিলেন, “great love demands great sacrifices!”
৩। ল্যাঞ্ছলট অ্যান্ড গুইনেভারাঃ
আরেকটি রাজকীয় এবং সেই সঙ্গে ট্র্যাজিক লাভ স্টোরি গুলোর মধ্যে অন্যতম হল, এই আর্থারিয়ান প্রেম কাহিনী স্যার ল্যাঞ্ছলট অ্যান্ড লেডী গুইনেভারা। ইংলিশ কিং আর্থারের স্ত্রী, রাণী গুইনেভারার প্রেমে পড়েছিলেন সেই রাজ্যের বীর একজন নাইট, স্যার ল্যাঞ্ছলট। রাজা আর্থারের অবহেলা আর অবজ্ঞার কারণে, একসময় রাণী গুইনেভারাও তাঁর প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু একদিন, রাজা আর্থারের অপর নাইট স্যার আগ্রাভেইন, স্যার মোড্রেড এবং একদল সৈন্য এই যুগলকে বদ্ধ কামরায় আবিষ্কার করে ফেলে। পরকীয়ার অপরাধে রাণী গুইনেভারাকে আগুনে পুড়িয়ে মারার শাস্তি ঘোষণা করা হয়। স্যার ল্যাঞ্ছলট তাঁর প্রেমিকা লেডী গুইনেভারাকে যুদ্ধ করে বাঁচিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়, কিন্তু তাঁদের এই প্রেমের জন্য পুরো রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং অনেক মৃত্যুর জন্য তাঁরা নিজেদের দায়ী করে, নিজেদের মধ্যে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে তাঁরা দুজনেই দুটি ভিন্ন জায়গায় ধর্মের সেবক হয়ে যান।
৪। ট্রিস্টান অ্যান্ড অ্যাইসোলেইডঃ
অনন্য এই প্রেমের কথা আমরা জানতে পারি, মধ্য ইংরেজিয় শাসন আমলে। আয়ারল্যান্ডের রাজকুমারী ছিলেন অ্যাইসোলেইড, তিনি ছিলেন ক্রনওয়ালের রাজা মার্কের বাগদত্তা। তিনি রাজকুমারী অ্যাইসোলেইডকে নিজ রাজ্য ক্রনওয়ালে ফিরিয়ে আনার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁর ভাইয়ের ছেলে ট্রিস্টানকে। কিন্তু সেই ভ্রমণে ট্রিস্টান অ্যান্ড অ্যাইসোলেইড একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। যদিও শেষ পর্যন্ত অ্যাইসোলেইড রাজা মার্ককেই বিয়ে করতে বাধ্য হন। কিন্তু তাঁদের প্রেমের কথা রাজ্যে গোপন থাকে না। রাজা মার্ক তাঁদের দুজনকেই মাফ করে দেন, এবং বিনিমিয়ে ট্রিস্টানকে রাজ্য ছেড়ে যেতে বাধ্য করেন। পরে ট্রিস্টান, অ্যাইসোলেইডের সাথে নামের মিল থাকার কারণে ইসেউল্ট নামক এক রমণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু, তাঁর আত্মার পুরোটা জুড়ে ছিল অ্যাইসোলেইডের প্রতি প্রেম। এক পর্যায়ে ট্রিস্টান, অ্যাইসোলেইডের বিরহে গুরুতর অসুস্থ হয়ে যান। তিনি অ্যাইসোলেইড কে শেষবারের মতো দেখতে একটি জাহাজ পাঠান। তাঁর স্ত্রী ইসেউল্ট কে বলেছিলেন, অ্যাইসোলেইড যদি আসে, জাহাজে যেন সাদা পতাকা লাগানো হয়। কিন্তু স্ত্রী ইসেউল্ট মিথ্যে বলে, জাহাজে কালো পাতাকা লাগিয়ে রাখেন। ট্রিস্টান ভাবলেন অ্যাইসোলেইড আর আসবেন না। পরে তিনি মারা যান। পরে তাঁর শোকে অ্যাইসোলেইড, তাঁরই রাজ্যে মারা যান।
৫।প্যারিস অ্যান্ড হেলেনঃ
গ্রীক পুরাণের ফ্যাক্ট এবং ফিকশনের অপূর্ব এক সংমিশ্রণ হল, গ্রীকলেখক কালজয়ী হোমারের জগতবিখ্যাত এপিক “ইলিয়াড।” নাম করা সেই যুদ্ধের নাম হল, “Trojan War!” যে যুদ্ধে ধ্বংস হয়েছিল পুরো একটা শহর- ট্রয়! ইতিহাসে যা “war for Helen” কিংবা “Helen of troy” নামে বিখ্যাত। গ্রীক পুরাণ অনুযায়ী অনন্য এই সুন্দরী হেলেন ছিলেন, ট্রয় নগরীর পার্শ্ববর্তী, স্পার্টার রাজা মেনেলাসের স্ত্রী। ট্রয়ের ছোট রাজকুমার প্যারিস তাঁকে চুরি করে তাঁর রাজ্যে নিয়ে এসেছিলেন। এতেই বেঁধে গেল ১২ বছর ধরে চলা এক ঐতিহাসিক যুদ্ধ। স্পার্টার পক্ষে এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন রাজা এগামেমনন। এমনকি এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন গ্রীক দেব ও দেবীরা! ট্রয় রাজকুমার হেক্টর, প্যারিস, দেবতা অ্যাকিলিস, স্পার্টার রাজা মেনেলাস সহ অনেকেই নিহত হন। প্রেমের জন্য এত রক্তপাত আর ধ্বংস পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই।
৬। অরফিয়াস অ্যান্ড ইরিডাইসঃ
এটিও একটি গ্রীক মিথ। সাহিত্যে তাঁদের কাহিনীকে স্বীকৃত দেয়া হয়, “tale of desperate love” বলে। গ্রীক পুরাণ মতে, স্বর্গের এক বিবাহিত পরী ইরিডাইসের প্রেমে পড়েন হারপুন নামক এক বাদ্যবাজক অরফিয়াস। কিন্তু দেবতা এরিসটেইয়াসের সাথে এই দুর্ঘটনায় অরফিয়াস, ইরিডাইসকে হারিয়ে ফেলে। তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়াহয় পাতালপুরীতে। কিন্তু অরফিয়াস তাঁর জাদুকরীএক বাদ্য মূর্ছনায় হারপুন বাজিয়ে দেব- দেবীর মন জয় করে ফেলে। তিনি তাঁর রাজ্য ফেলে ক্রমাগত হারপুন বাজিয়ে তাঁর ভালোবাসা ইরিডাইসের জন্য নানা জায়গায় অপেক্ষা করেছেন। অবশেষে সঙ্গীত দেবতা হেডস ও পারসিফোনের ক্ষমায় অরফিয়াস পাতালপুরীতে জান ইরিডাইসকে উদ্ধার করতে। কিন্তু শর্ত থাকে যে, অরফিয়াস পৃথিবীতে অবতরণের আগে ইরিডাইসকে পিছন ফিরে দেখতে পারবেন না। কিন্তু অরফিয়াস অতি আবেগে আর উৎকণ্ঠায় দেবতাদের শর্তের কথা ভুলে যায়, এবং ইরিডাইসকে দেখতে থাকে। ফলাফল, চিরতরের জন্য ইরিডাইসকে হারিয়ে ফেলে। বলা হয়ে থাকে, এই যে প্রেম কিংবা বিরহে সঙ্গীত ও মিউজিক অনেক বড় ভুমিকা থাকে, সেটা নাকি অরফিয়াস আর ইরিডাইসের প্রেমকাহিনী থেকেই অনুপ্রাণিত হওয়া।
৭। নেপোলিয়ন অ্যান্ড জোসেপাইনঃ
মহাবীর নেপোলিয়ন ২৬ বছর বয়সে, বয়সে বড় তাঁর রাজ্যের এক ধনী মহিলা জোসেপাইনের প্রেমে পড়েন। তাঁরা দুজনেই তাঁদের সম্পর্কের বিষয়ে শ্রদ্ধাবোধ, এবং ত্যাগ বজায় রেখেছিলেন। অনেকটা রাজ্য শাসনের ভারে অনেকটা অগোচরেই ছিল এই প্রেম। যদিও তাঁরা সর্বদাই স্বীকার করতেন তাঁদের সম্পর্কের কথা। নেপোলিয়ন খুব চাইতেন জোসেপাইনের গর্ভে যেন তাঁর সন্তান হয়, কিন্তু মাতৃত্ব ধারণে অক্ষম ছিলেন জোসেপাইন। কিন্তু চিরজীবন তাঁরা তাঁদের প্রতি ভালোবাসা ধরে রেখেছিলেন।
৮। ওডিসিয়াস অ্যান্ড পেনেলোপঃ
গ্রীক অন্যান্য প্রেমের গল্পের মতোই, এই জুটির প্রেমমেও ছিল, ত্যাগ আর বিসর্জন। প্রেমের ক্ষেত্রে গ্রীক পুরাণের বেশীর ভাগ কাহিনীরই মূলমন্ত্র হল, “Tragedy and sacrifice.” জুটি তাঁদের মিলনের জন্য অপেক্ষা করেছিল দীর্ঘ ২০ বছর! তাঁদের বিয়ের কিছু পরেই ওডিসিয়াসকে যুদ্ধে চলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু স্বামীর প্রত্যাবর্তননের আশায় আশায় পেনেলোপ তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছিল ২০ বছর। এরমধ্যে তিনি ১০৮ জন রাজাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, অপরদিকে ওডিসিয়াসও স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্থ ছিলেন। তিনিও অনেক দেবীর প্রেম ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। Homer রচিত এই এপিকে তিনি প্রমাণ করেছেন, “ভালোবাসার অন্য নাম- অপেক্ষা!” তিনি বলেছেন, “remember that true love is worth waiting for!”
৯। পাউলো অ্যান্ড ফ্রান্সেসকাঃ
সত্য কাহিনী অবলম্বনে এই চরিত্র দুটি নেয়া হয়েছে বিশ্ব বিখ্যাত লেখক Dante-এর অমর সাহিত্য কর্ম হল “Divine Comedy” থেকে। ফ্রান্সেসকার স্বামী মালাটেস্তা ছিলেন একজন ভয়ানক অপরাধী। তাঁর ছোট ভাই পাউলোর সাথে মিলে ফ্রান্সেসকা Dante এর বই পড়ে সময় কাটাতেন। পরবর্তীতে দুজনের মধ্যে প্রেম জন্মে নেয়। ঘটনা জানাজানি হবার পর খুব স্বাভাবিক ভাবেই ফ্রান্সেসকার স্বামী দুজনকেই হত্যা করে।
১০। স্কারলেট ও’হারা অ্যান্ড রেথ বাটলারঃ
বলা হয়ে থাকে বিখ্যাত লেখক Margaret Mitchell এর কালজয়ী ক্লাসিক “Gone with the Wind,” হল ভালোবাসা বাসি মানুষের জন্য এক বাইবেল! সিভিল ওয়ারের পটভূমি নিয়ে, এবং স্কারলেট-বাটলারের বাঁধন হারা-উন্মাতাল প্রেম, মানসিক টানাপোড়ন, চাওয়া- পাওয়ার হিসেব, দেশের অস্থির সময়—এই সব কিছু মিলিয়েই এটি হয়ে উঠেছে অমর এক সাহিত্য কর্ম। উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্কারলেট কখনোই কারও বাঁধনে নিজেকে বাঁধতে নারাজ ছিল। কিন্তু বাটলারের উন্মত্ত প্রেমকে সে কখনোই উপেক্ষা করতে পারেনি। সুখী জীবনের চিন্তায় বিভোর স্কারলেটের সুখ বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। তাঁর মনস্তান্তিক দ্বন্দ্ব রয়েই গেল। আর তাইতো শেষে স্কারলেট বলেছিল, “Tomorrow is another day!”
১১। জেইন আয়ার অ্যান্ড এডওয়ার্ড রজেস্টারঃ
লেখক ‘’Charlotte Bronte” এর বিখ্যাত উপন্যাস “Jane Eyre” এর প্রধান চরিত্র জেইন ছিল এতিম এক মেয়ে, যে কিনা ব্যবসায়ী রজেস্টারের ঘর দেখভাল করার জন্য গভর্নেস হিসেবে আসে। বয়সে অনেক বড় আর প্রচণ্ড একা একটা মানুষ রজেস্টারের জীবনে জেইন যেন এক বসন্ত নিয়ে এসেছিল। বয়স কিংবা সামাজিক ব্যবধান কোন কিছুই তাঁদের প্রেমে বাঁধা হতে পারেনি। কিন্তু বিয়ের দিনে জেইন আবিষ্কার করে রজেস্টার পূর্ববিবাহিত। জেইন তাঁকে ছেড়ে চলে যায়। পরে জেইন জানতে পারে, রজেস্টার তাঁর অসুস্থ ও পাগল স্ত্রীর প্রতি কোন অবহেলা করেনি। শুধু তাঁকে হারাবার ভয়ে এই সত্যটা গোপন করেছিল। পরে যদিও ভয়াবহ এক অগ্নিকান্ডে রজেস্টার তাঁর বাড়ি, অসুস্থ স্ত্রী কে হারিয়ে ফেলেছিল। সে নিজেও তাঁর দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। অবশেষে দীর্ঘ বিরহের পর জেইন তাঁর কাছে ফিরে আসে। এই উপন্যাসের প্রতিটি বাক্য যেন এক একটি প্রেম প্রত্র!! প্রচণ্ড আবেগি সব লেখা পড়ে পাঠকের মন খুব সহজেই প্রবাবিত হয়।
১২। লায়লা এবং মজনুঃ
মধ্যযুগীয় ইরানী কবি “Nizami of Ganje” নামে যিনি পরিচিত, তিনি আরবীয় সামাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে রচনা করেন, “Layla and Majnun is a tragic tale about unattainable love.” প্রেমের ইতিহাসে, বিশেষ করে এই উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজে কালজয়ী হয়ে উঠে দুটি চরিত্র, লায়লা ও মজনু। স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক মানা হয় এই জুটিকে। বাল্যকাল থেকেই লায়লা আর মজনুর প্রেম গড়ে উঠে। কিন্তু দুজনের সামাজিক ব্যবধান বিপত্তি বাঁধাল। বলা আছে, লায়লার পিতা মজনুকে আহত করলে লায়লারও আহত হতো, এমননি ছিল তাঁদের সেই স্বর্গীয় প্রেম। মজনু কে মরুভূতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে বেদুঈনের দল মজনুর হার না মানা ভালোবাসা দেখে তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। তাঁরা লায়লার বাবাকে যুদ্ধে হারিয়ে দেয়। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে যায়। লায়লাকে তাঁর পিতা জোর করে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। স্বামী মারা যাবার পর, যদিও লায়লা মজনুর কাছে ফিরে আসে, কিন্তু প্রচণ্ড দুঃখ আর অনাহারে মজনু মারা যায়। লায়লাও তাঁর ভালোবাসা মজনুর পথ অনুসরণ করে। “দুই দেহ এক আত্মা,” নামক বহুল প্রচলিত কথা এই যুগলের অনুপ্রেরণায় পাওয়া।
১৩। লুইস অ্যান্ড বেলার্ডঃ
“A story of a monk and a nun,” যাদের চিঠিগুলোই সবচেয়ে বেশী বিখ্যাত। “লাভ লেটারস” বলে আমরা যে টার্ম টা ব্যবহার করি, তা এই যুগলের বদৌলতেই পাই। প্যারিসের বিখ্যাত নটরডেম স্কুলে পড়তে যায় পিটার বেলার্ড। তাঁর শিক্ষক বিখ্যাত দার্শনিক ফ্লোবার্ডের অনুরোধে, ভগ্নীকন্যা লুইসকে পড়াতে রাজী হয়। বেলার্ডের জ্ঞান, মেধা এবং বুদ্ধিমত্তার আকৃষ্ট হয়ে লুইস বেলার্ডের প্রেমে পড়ে যায়। তাঁরা গোপনে বিয়ের বাঁধনে আবদ্ধ হয় এবং লুইস গর্ভবতী হয়ে পড়ে। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ফ্লোবার্ড। তাঁর ভয়ে বেলার্ড, লুইসকে নিরাপদ জায়গায় রেখে আসে। কিন্তু এক রাতে ফ্লোবার্ডের অনুচররা ঘুমন্ত বেলার্ডের অঙ্গহানি করে। বেলার্ডের কষ্টে বাকী জীবন লুইস নান হিসেবে কাটিয়ে দেয়, এবং বেলার্ড হয়ে যায় একজন মঙ্ক (ধর্মীয় গুরু)! ইতিহাস হয়ে থাকে তাঁদের আত্মত্যাগ, আজও বিখ্যাত হয়ে আছে তাঁদের প্রেম পত্রগুলো।
১৪। রামোস অ্যান্ড থিইবীঃ
খুবই আবেগি আর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া আরেকটি রোমান প্রেম কাহিনী। বলা হয়ে থাকে, এই জুটি তাঁদের প্রেম দিয়ে প্রভু থেকে কথা নিয়ে রেখেছে যে, স্বর্গেও তাঁরা এক সাথে থাকবে! ব্যবিলনের সবচেয়ে সুন্দরী কুমারী থিইবীর বাল্যকালের বন্ধু ছিল সুপুরুষ রামোস। তাঁরা ছিল প্রতিবেশী। একই সাথে বেড়ে উঠতে গিয়ে একে অপরের প্রেমে পড়ে। কিন্তু তাঁদের পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নেয় না। তাই তাঁরা ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। সূর্যাস্তের সময় ঘর পার্শ্ববর্তী একটা ম্যালবেরী গাছের কাছে দুজনের দেখা করার কথা থাকে। থিইবী গোপনীয়তা রক্ষার্তে মুখে একটা কাপড় পরে (veil) রেমোসের জন্য গাছের নিচে অপেক্ষা করতে থাকে। হঠাৎ এক ক্ষুদার্ত সিংহ আসে থিইবীর কাছে। ভয় পেয়ে দৌড়ে অন্যজায়গায় আশ্রয় নেয়ার সময় তাঁর মুখের কাপড়টি খুলে পড়ে যায়। পরে রামোস এসে দেখে যে, সিংহের মুখে সেই কাপড়। সে ভাবে যে, সিংহ তাঁর থিইবীকে ভক্ষণ করেছে। সেও তাঁর ছুরি দিয়ে নিজের বুক কেটে ফেলে। অনেকক্ষণ পর থিইবী এসে মৃত রামোসকে দেখতে পায়। তারপর সেও সেই একই ছুরি দিয়ে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়।
১৫। ডার্সি অ্যান্ড এলিজাবেথঃ
বিখ্যাত ইংরেজ উপন্যাসিক Jane Austen এর কালজয়ী প্রেমের গল্প হল “Pride and Prejudice” এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হল তৎকালীন ইংরেজ ধনী সমাজের এক তরুণ ডার্সি। উচ্চ শিক্ষিত, প্রচণ্ড আহঙ্কারি, স্বভাবে নাকউঁচু, আর বংশমর্যাদায় গর্বিত এই ডার্সি, ঘটনাচক্রে এবং নানা নাটকীটার মাঝে সাধারণ-মধ্যবিত্ত এক পরিবারের মেয়ে এলিজাবেথের সাথে পরিচয় হয়। এলিজাবেথ ছিল মিঃ অ্যান্ড মিসেস বেনেটের পাঁচটি মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। মিঃ অ্যান্ড মিসেস বেনেট সবসময় তাঁদের মেয়েদের প্রচণ্ড স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। নাকউঁচু ডার্সি সবসময় এলিজাবেথ কে তাঁদের সামাজিক এবং পারিবারিক অবস্থান নিয়ে ব্যাঙ্গ, অপমান করতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে এলিজাবেথের রূপ ও গুণে মুগ্ধ হয়ে সেটা ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ডার্সির অভিজাত পরিবার তা মেনে নেয় না, ওদিকে এলিজাবেথের পরিবারেরও ঘটতে থাকে নানা অঘটন। অবশেষে নানা নাটকীয়তার পরে ডার্সি- এলিজাবেথের মিলন হয়। নানা নাটকীয়তা, হাস্যরসে ভরা, তৎকালীন ইংরেজ সমাজের হরেক রকম দিক, লেখকের চমৎকার বর্ণনায় এই উপন্যাসটি হয়ে উঠেছে ইংরেজি সাহিত্যের অমর এক সৃষ্টি।
১৬। সেলিম এবং আনারকলিঃ
মোঘল সম্রাট আকবর পুত্র সেলিম আর রাজ্যের নর্তকী অনিন্দ্য সুন্দরী আনারকলির প্রেম সম্পর্কে আমরা সবাই-ই জানি। প্রেমের জন্য এত বড় আত্মত্যাগ এই উপমহাদেশে আর কেউ দেখেনি। সম্রাট আকবর এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নেন নি। কিন্তু সেলিম ও দমবার পাত্র নয়। আনারকলিকে পাবার জন্য নিজ পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু শক্তিশালী আকবর বাহিনীর কাছে সেলিম খুব সহজেই পরাজিত হয়। নিজ সন্তানের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেন আকবর। সেলিম কে বাঁচাতে আনারকলি তাঁর হার স্বীকার করেন, এবং নিজের জীবনের বিনিময়ে সেলিমের জীবন ভিক্ষা চান। অবশেষে, সেলিমের চোখের সামনেই আনারকলিকে জীবন্ত কবর দেয়া হয়!!
১৭। পকাহন্টাস অ্যান্ড জন স্মীথঃ
ভারতীয় পাঠান রাজা পউহাতান ছিলেন আমেরিকার ভার্জিয়ানা অঙ্গরাজ্যের এলগনকুইন ইন্ডিয়ানস নামক সেনাদলের সদস্য। তাঁর কন্যা পকাহন্টাস প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে যায় আমেরিকান এক ছেলের- নাম জন স্মীথ। পকাহন্টাস তাঁর বাবার সৈন্যদলের হাত থেকে রক্ষা করে স্মীথ কে। সেই কৃতজ্ঞতা বোধ থেকেই এই প্রেমের শুরু। পরে তাঁরা একে অপরকে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে নানাভাবে সাহায্য করে। দু পরিবারের মদ্ধেও সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু এক যুদ্ধে গানপাউডার দ্বারা আহত হয়ে স্মীথ যখন আমেরিকা ছেড়ে ইংল্যান্ডে চলে আসে, তখন পকাহন্টাসকে মিথ্যে বলা হয়, স্মীথ মারা গেছে! সাথে পকাহন্টাস কে গ্রেফতার করা হয়, তাঁর পিতার সৈন্যদলকে কাবু করার জন্য। অনেক বছর বন্দী থাকার পর, অনেক চড়াই উৎরিয়ে পকাহন্টাস খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে, এবং নাম পাল্টে রাখে “রেবেকা” (Rebecca)। ইতিমধ্যে সে জন রলফ নামে একজন কে বিয়ে করে। এবং প্রায় ৮ বছর পর লন্ডনে এসে রেবেকা জানতে পারে স্মীথ বেঁচে আছে। কাকতালীয় ভাবে দেখা হওয়া- ওটাই তাঁদের শেষ দেখা।
১৮। শাহজাহান এবং মুমতাজঃ
১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে আরজুমান বানু নামক এক বালিকার সাথে ১৫ বছরের শাহজাহা্নের বিয়ে হয়। পরে যিনি কিনা মোঘল সাম্রাজ্য পরিচালনা করেন। শাহজাহান তাঁর ১৪ সন্তানের মাতা এবং প্রিয় স্ত্রীর নাম পাল্টে রাখেন মুমতাজ মহল। ১৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে মুমতাজের মৃত্যুর পর, স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি স্থাপত্য নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন। যাতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেছিল, প্রায় ১ হাজার হাতী ব্যবহার করা হয়েছিল, এবং প্রায় ২০ বছর লেগেছিল সেই স্থাপত্য নির্মাণ শেষ হতে। যদিও সেই অনিন্দ্য সুন্দর কালো মার্বেল পাথরের সৌন্দর্য তিনি সম্পূর্ণ দেখে যেতে পারেননি। নিজ পুত্র দ্বারা তিনি লাল আগ্রা ফোর্ট তিনি বন্দী ছিলেন অনেকদিন। যমুনাতীরে যেখানে “তাজমল” গড়ে ওঠেছিল, শেষ জীবনে শাহজাহান ওখানে একাকী সময় পার করেছেন। মৃত্যুর পর তাঁকে সেখানে সমাহিত করা হয়। তাঁর ভালোবাসার নিদর্শনে তিনি রেখে যান, পৃথিবীর সপ্তাচার্যের মাঝে একটি “তাজমল!”
১৯। মেরি অ্যান্ড পিয়েরি কুরীঃ
এই জুটির ছিলনা কোন লোকদেখানো, বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ। ছিল না কোন পুরাণিক ট্র্যাজেডি, দ্বন্দ্ব, যুদ্ধ, দেবদেবীর হস্তক্ষেপ, কিংবা ছিলনা কোন অবৈধ কাহিনী। আধুনিক আর দশটা মানুষের মতোই ছিল তাঁদের প্রেম কাহিনী। কিন্তু ছিল বিশ্বাস, এঁরা ছিলেন একে অপরের অনুপ্রেরণা! মানবতার কল্যাণে আর কাজের মধ্যেই এগিয়েছে তাঁদের প্রেম। তৎকালীন পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় নারীদের রিসার্চে অনুমতি দেয় নি বলে, ১৮৯১ সালে রিসার্চ করতে মেরী গিয়েছিলেন ফ্রান্সের সর্বরনে। মেধাবী মেরী কে লাইব্রেরী, ল্যাবরোটারি সবখানেই আবিষ্কার করেন আরেক মেধাবী, মেরীর ল্যাবরোটারি ডিরেক্টর পিয়েরি কুরী। কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর, ১৮৯৫ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। ১৮৯৮ সালে এই বৈজ্ঞানিক যুগল আবিষ্কার করেন পলোনিয়াম আর রেডিয়াম। পদার্থ বিদ্যায় এবং রেডিও-আক্টইভিটিতে অবদানের জন্য এই দম্পতি ১৯০৩ সালে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। ১৯০৪ সালে পিয়েরি কুরী মারা যাবার পর মেরী নিজের স্বামীর দেশেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নেন এবং কুরীর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। অবশেষে ১৯১১ সালে মেরী কুরী পৃথিবীর একমাত্র নারী যিনি দ্বিতীয়বারের মতো এবং ভিন্ন বিষয়ে নোবেল অর্জন করেন। এবার তাঁর বিষয় ছিল কেমিস্ট্রি! ১৯৩৪ সালে লিওকিমিইয়ায় মারা যাবার আগ পর্যন্ত স্বামী পিয়েরি কুরীর বিভিন্ন রিসার্চ তিনি চালিয়ে যান।
২০। কুইন ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড প্রিন্স আলবার্টঃ
হাজার বছরের পুরানো ইংরেজ সিংহাসন, আর তাঁদের হাজার হাজার প্রেম কাহিনীর ভিড়ে বলা হয়ে থাকে কুইন ভিক্টোরিয়া আর প্রিন্স আলবার্টের প্রেম কাহিনী অতুলনীয়। কুইন ভিক্টোরিয়া তাঁর স্বামী প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুর পর প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত তাঁর জন্য শোক করেছেন। ভিক্টোরিয়া তাঁর চাচা king William- iv এর মৃত্যুর পর ১৮৩৭ সালে ইংরেজ সিংহাসনের দায়িত্ব নেন। ১৮৪০ সালে কুইন ভিক্টোরিয়া তাঁর ফার্স্ট কাজিন প্রিন্স আলবার্ট কে বিয়ে করেন। প্রিন্স আলবার্ট ছিলেন জার্মান সংস্কৃতিমনা এক উদার, প্রাণোচ্ছল মানুষ। অনেকের অনেক কটু কথায় কান না দিয়ে তাঁরা সুখী একটা পরিবার গঠন করেছিলেন। তাঁরা একে অপরকে প্রচণ্ড ভালবাসতেন। তাঁদের ছিল ৯ জন সন্তান। ১৮৬১ সালে স্বামী আলবার্ট মারা যাবার পর, তিনবছর পর্যন্ত কুইন ভিক্টোরিয়া জনগণের সামনে আসেননি। পরে জনগণের চাপে এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন দিস্রাইলের নেতৃত্বে ১৬৮৮ তে নতুন পার্লামেন্ট ঘোষণা করেন। ১৯০১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, তিনি যেখানেই যেতেন, কালো কাপড় পরে যেতেন। ব্যক্তিগত শোককে শক্তিতে পরিণত করে, কুইন ভিক্টোরিয়ার শাসনামলই ছিল ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শাসনামল। ব্রিটিশ এই রাজত্বকে তখন থেকেই বলা হয়, “the sun never set.”
___________________________________________________
তথ্য ও ছবিঃ উইকি ও ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট। সেই সাথে সাহিত্যের ছাত্রী হবার সুবিধায় নিজের অল্পস্বল্প জ্ঞান!!
বাছাইপ্রক্রিয়াঃ ইন্টারনেট থেকে পাওয়া এই বিশটি যুগল নির্বাচিত করা হয়েছে মূলত প্রাচীন এবং ইতিহাসে অপেক্ষাকৃত যারা আগে এসেছেন সেই ভিত্তিতে। তারপর দেখা হয়েছে, কাদের ঘটনা বহুলপ্রচলিত এবং বিশ্বের বেশীরভাগ মানুষ জানেন এমন সব কাহিনী। এমন নয় যে, ভালোবাসায় আর কেও বিখ্যাত হন নি।
আরও অনেক কাহিনী, হাজারো সাহিত্যকর্ম যেমনঃ শেক্সপিয়ারের আরেকটি অসাধারণ ট্র্যাজিক সাহিত্য ওথেলো-দেসদিমোনা চরিত্র, পার্সিয়ান বিখ্যাত প্রেম কাহিনী শিরি-ফরহাদ, , রামায়ণের রাম-সীতা, শরৎচন্দ্রের দেবদাস-পার্বতী, রবীন্দ্র ঠাকুরের "শেষের কবিতা" র অমিত-লাবণ্য চরিত্রের কথা পৃথিবীর সব বাঙালীর প্রিয়, ইংরেজ রাজা Edward-viii মিসেস ওয়ালিসের প্রেমে পড়ে রাজত্ব ত্যাগের কাহিনী, Emily Bronte এর বিখ্যাত উপন্যাস “Wuthering Heights” এর হেথক্লিফ-ক্যাথরিন জুটি, সহ আরও অনেক অনেক বিখ্যাত কাহিনী ও সাহিত্য কর্ম আছে, সেগুলোর মূলমন্ত্র ছিল- ভালোবাসা। যতদিন পৃথিবী থাকবে, ভালোবাসার জন্য যাঁদের আত্মত্যাগ সবাই স্মরণ করবে।
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রেমের তাঁরাই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন,কিংবা বিখ্যাত আর ঐতিহাসিক সাহিত্যকর্মের বেশীরভাগ কাহিনীতেই আছে ভালোবাসার জন্য ত্যাগ, কষ্ট, অপেক্ষা আর সেক্রিফাইস!! আবারো সেই পুরানো বিতর্ক সামনে চলে আসেঃ প্রেমের সার্থকতা কিসে? মিলনে নাকি বিরহে?
যাক, বিতর্কে না যাই। আসলে প্রতিটি মানুষের প্রেমই তার নিজের কাছে বিখ্যাত, বিশেষ কিছু। প্রেম-ভালবাসা, বিরহ-কষ্ট এগুলোর কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা হয় না। ব্যক্তি বিশেষে এগুলোরও তারতম্য ঘটে। তাইতো পৃথিবীর আদি এই রূপটা নিয়ে আজও মানুষের মাতামাতি। ভালোবাসা-বাসির সাথে জড়িত প্রতিটি মানুষের জন্য শুভেচ্ছা।
"Never was a story of love nor woe that of Juliet and her Romeo." সবাই-ই মেনে থাকেন এই জুটিই, প্রেমের ইতিহাস বা গল্পগুলোর মধ্যে সর্বাধিক প্রচারিত বা সবচেয়ে বেশী বিখ্যাত। যেন ভালোবাসার অপর নাম রমিও-জুলিয়েট। বিশ্ব বিখ্যাত ইংরেজ লেখক, William Shakespeare এর কালজয়ী ট্রাজেডি হল এই “Romeo and Juliet!” দুটি ভিন্ন পরিবারের পূর্ববর্তী রেষারেষি, বংশীয় অহংকার ভেদ করে দুজন তরুণতরুণীর প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়া। পরবর্তী তে পরিবারের বাঁধা, ভয় দেখানো, নানা মাসসিক সংশয়- টানাপোড়ন সব উপেক্ষা করে নানা নাটকীয়তার মাঝে তাদের বিয়ে করা। এবং সবশেষে, তথ্যগত ভুলবোঝা বুঝি জনিত কারণে বিষপানে দুজনের মৃত্যু!! সব মিলিয়েই, রোমিও- জুলিয়েট কাহিনী হয়ে গেছে অমর এক প্রেম গাঁথা! তাই পৃথিবীতে যখনই প্রেমের জন্য ত্যাগ- তিতিক্ষার কথা বলা হয়, সবার আগেই উঠে আসে এই যুগলের নাম! যুগে যুগে অসংখ্য নাটক, সিনেমা বানানো হয়েছে এই “timeless love” নিয়ে।
২। এন্টোনি অ্যান্ড ক্লিওপার্টাঃ
অনেকের মধ্যে অন্যতম আরেকটি অমর প্রেমগাঁথার নাম, মার্ক এন্টোনি- ক্লিওপার্টা। ঐতিহাসিক এবং একই সাথে দারুণ নাটকীয় এই প্রেম হয়, অনিন্দ সুন্দরী মিসরীয় রাণী ক্লিওপার্টা আর তাঁর প্রধান সেনাপতি এন্টোনির মাঝে। শক্তিশালী এবং ঐতিহাসিক চরিত্রদুটির মাঝের এই অমর প্রেম আকর্ষণীয়ভাবে আমাদের কাছে তুলে এনেছিলেন Shakespeare তাঁর যাদুকরী লিখনির মাধ্যমে। রাজকীয় ঘাত-প্রতিঘাত, জয়পরাজয় উপেক্ষা করে তাঁরা বিয়ে করেছিলেন। পরবর্তীতে রোমান দের সাথে যুদ্ধরত এন্টোনির মনোবল ভাঙার জন্য, তাঁকে যুদ্ধের ময়দানে মিথ্যে সংবাদ শুনিয়েছিলেন যে, শত্রুরা ক্লিওপার্টাকে হত্যা করেছে। তারপর এন্টোনি নিজ ছুরিতে মৃত্যুবরণ করেন, অন্যদিকে এন্টোনির মৃত্যুসংবাদ শুনে মিসরীয় রাণী ক্লিওপার্টাও নিজ ছুরিতে আত্মহত্যা করেন। Shakespeare তাঁদের জন্য বলেছিলেন, “great love demands great sacrifices!”
৩। ল্যাঞ্ছলট অ্যান্ড গুইনেভারাঃ
আরেকটি রাজকীয় এবং সেই সঙ্গে ট্র্যাজিক লাভ স্টোরি গুলোর মধ্যে অন্যতম হল, এই আর্থারিয়ান প্রেম কাহিনী স্যার ল্যাঞ্ছলট অ্যান্ড লেডী গুইনেভারা। ইংলিশ কিং আর্থারের স্ত্রী, রাণী গুইনেভারার প্রেমে পড়েছিলেন সেই রাজ্যের বীর একজন নাইট, স্যার ল্যাঞ্ছলট। রাজা আর্থারের অবহেলা আর অবজ্ঞার কারণে, একসময় রাণী গুইনেভারাও তাঁর প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু একদিন, রাজা আর্থারের অপর নাইট স্যার আগ্রাভেইন, স্যার মোড্রেড এবং একদল সৈন্য এই যুগলকে বদ্ধ কামরায় আবিষ্কার করে ফেলে। পরকীয়ার অপরাধে রাণী গুইনেভারাকে আগুনে পুড়িয়ে মারার শাস্তি ঘোষণা করা হয়। স্যার ল্যাঞ্ছলট তাঁর প্রেমিকা লেডী গুইনেভারাকে যুদ্ধ করে বাঁচিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়, কিন্তু তাঁদের এই প্রেমের জন্য পুরো রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং অনেক মৃত্যুর জন্য তাঁরা নিজেদের দায়ী করে, নিজেদের মধ্যে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে তাঁরা দুজনেই দুটি ভিন্ন জায়গায় ধর্মের সেবক হয়ে যান।
৪। ট্রিস্টান অ্যান্ড অ্যাইসোলেইডঃ
অনন্য এই প্রেমের কথা আমরা জানতে পারি, মধ্য ইংরেজিয় শাসন আমলে। আয়ারল্যান্ডের রাজকুমারী ছিলেন অ্যাইসোলেইড, তিনি ছিলেন ক্রনওয়ালের রাজা মার্কের বাগদত্তা। তিনি রাজকুমারী অ্যাইসোলেইডকে নিজ রাজ্য ক্রনওয়ালে ফিরিয়ে আনার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁর ভাইয়ের ছেলে ট্রিস্টানকে। কিন্তু সেই ভ্রমণে ট্রিস্টান অ্যান্ড অ্যাইসোলেইড একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। যদিও শেষ পর্যন্ত অ্যাইসোলেইড রাজা মার্ককেই বিয়ে করতে বাধ্য হন। কিন্তু তাঁদের প্রেমের কথা রাজ্যে গোপন থাকে না। রাজা মার্ক তাঁদের দুজনকেই মাফ করে দেন, এবং বিনিমিয়ে ট্রিস্টানকে রাজ্য ছেড়ে যেতে বাধ্য করেন। পরে ট্রিস্টান, অ্যাইসোলেইডের সাথে নামের মিল থাকার কারণে ইসেউল্ট নামক এক রমণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু, তাঁর আত্মার পুরোটা জুড়ে ছিল অ্যাইসোলেইডের প্রতি প্রেম। এক পর্যায়ে ট্রিস্টান, অ্যাইসোলেইডের বিরহে গুরুতর অসুস্থ হয়ে যান। তিনি অ্যাইসোলেইড কে শেষবারের মতো দেখতে একটি জাহাজ পাঠান। তাঁর স্ত্রী ইসেউল্ট কে বলেছিলেন, অ্যাইসোলেইড যদি আসে, জাহাজে যেন সাদা পতাকা লাগানো হয়। কিন্তু স্ত্রী ইসেউল্ট মিথ্যে বলে, জাহাজে কালো পাতাকা লাগিয়ে রাখেন। ট্রিস্টান ভাবলেন অ্যাইসোলেইড আর আসবেন না। পরে তিনি মারা যান। পরে তাঁর শোকে অ্যাইসোলেইড, তাঁরই রাজ্যে মারা যান।
৫।প্যারিস অ্যান্ড হেলেনঃ
গ্রীক পুরাণের ফ্যাক্ট এবং ফিকশনের অপূর্ব এক সংমিশ্রণ হল, গ্রীকলেখক কালজয়ী হোমারের জগতবিখ্যাত এপিক “ইলিয়াড।” নাম করা সেই যুদ্ধের নাম হল, “Trojan War!” যে যুদ্ধে ধ্বংস হয়েছিল পুরো একটা শহর- ট্রয়! ইতিহাসে যা “war for Helen” কিংবা “Helen of troy” নামে বিখ্যাত। গ্রীক পুরাণ অনুযায়ী অনন্য এই সুন্দরী হেলেন ছিলেন, ট্রয় নগরীর পার্শ্ববর্তী, স্পার্টার রাজা মেনেলাসের স্ত্রী। ট্রয়ের ছোট রাজকুমার প্যারিস তাঁকে চুরি করে তাঁর রাজ্যে নিয়ে এসেছিলেন। এতেই বেঁধে গেল ১২ বছর ধরে চলা এক ঐতিহাসিক যুদ্ধ। স্পার্টার পক্ষে এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন রাজা এগামেমনন। এমনকি এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন গ্রীক দেব ও দেবীরা! ট্রয় রাজকুমার হেক্টর, প্যারিস, দেবতা অ্যাকিলিস, স্পার্টার রাজা মেনেলাস সহ অনেকেই নিহত হন। প্রেমের জন্য এত রক্তপাত আর ধ্বংস পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই।
৬। অরফিয়াস অ্যান্ড ইরিডাইসঃ
এটিও একটি গ্রীক মিথ। সাহিত্যে তাঁদের কাহিনীকে স্বীকৃত দেয়া হয়, “tale of desperate love” বলে। গ্রীক পুরাণ মতে, স্বর্গের এক বিবাহিত পরী ইরিডাইসের প্রেমে পড়েন হারপুন নামক এক বাদ্যবাজক অরফিয়াস। কিন্তু দেবতা এরিসটেইয়াসের সাথে এই দুর্ঘটনায় অরফিয়াস, ইরিডাইসকে হারিয়ে ফেলে। তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়াহয় পাতালপুরীতে। কিন্তু অরফিয়াস তাঁর জাদুকরীএক বাদ্য মূর্ছনায় হারপুন বাজিয়ে দেব- দেবীর মন জয় করে ফেলে। তিনি তাঁর রাজ্য ফেলে ক্রমাগত হারপুন বাজিয়ে তাঁর ভালোবাসা ইরিডাইসের জন্য নানা জায়গায় অপেক্ষা করেছেন। অবশেষে সঙ্গীত দেবতা হেডস ও পারসিফোনের ক্ষমায় অরফিয়াস পাতালপুরীতে জান ইরিডাইসকে উদ্ধার করতে। কিন্তু শর্ত থাকে যে, অরফিয়াস পৃথিবীতে অবতরণের আগে ইরিডাইসকে পিছন ফিরে দেখতে পারবেন না। কিন্তু অরফিয়াস অতি আবেগে আর উৎকণ্ঠায় দেবতাদের শর্তের কথা ভুলে যায়, এবং ইরিডাইসকে দেখতে থাকে। ফলাফল, চিরতরের জন্য ইরিডাইসকে হারিয়ে ফেলে। বলা হয়ে থাকে, এই যে প্রেম কিংবা বিরহে সঙ্গীত ও মিউজিক অনেক বড় ভুমিকা থাকে, সেটা নাকি অরফিয়াস আর ইরিডাইসের প্রেমকাহিনী থেকেই অনুপ্রাণিত হওয়া।
৭। নেপোলিয়ন অ্যান্ড জোসেপাইনঃ
মহাবীর নেপোলিয়ন ২৬ বছর বয়সে, বয়সে বড় তাঁর রাজ্যের এক ধনী মহিলা জোসেপাইনের প্রেমে পড়েন। তাঁরা দুজনেই তাঁদের সম্পর্কের বিষয়ে শ্রদ্ধাবোধ, এবং ত্যাগ বজায় রেখেছিলেন। অনেকটা রাজ্য শাসনের ভারে অনেকটা অগোচরেই ছিল এই প্রেম। যদিও তাঁরা সর্বদাই স্বীকার করতেন তাঁদের সম্পর্কের কথা। নেপোলিয়ন খুব চাইতেন জোসেপাইনের গর্ভে যেন তাঁর সন্তান হয়, কিন্তু মাতৃত্ব ধারণে অক্ষম ছিলেন জোসেপাইন। কিন্তু চিরজীবন তাঁরা তাঁদের প্রতি ভালোবাসা ধরে রেখেছিলেন।
৮। ওডিসিয়াস অ্যান্ড পেনেলোপঃ
গ্রীক অন্যান্য প্রেমের গল্পের মতোই, এই জুটির প্রেমমেও ছিল, ত্যাগ আর বিসর্জন। প্রেমের ক্ষেত্রে গ্রীক পুরাণের বেশীর ভাগ কাহিনীরই মূলমন্ত্র হল, “Tragedy and sacrifice.” জুটি তাঁদের মিলনের জন্য অপেক্ষা করেছিল দীর্ঘ ২০ বছর! তাঁদের বিয়ের কিছু পরেই ওডিসিয়াসকে যুদ্ধে চলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু স্বামীর প্রত্যাবর্তননের আশায় আশায় পেনেলোপ তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছিল ২০ বছর। এরমধ্যে তিনি ১০৮ জন রাজাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, অপরদিকে ওডিসিয়াসও স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্থ ছিলেন। তিনিও অনেক দেবীর প্রেম ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। Homer রচিত এই এপিকে তিনি প্রমাণ করেছেন, “ভালোবাসার অন্য নাম- অপেক্ষা!” তিনি বলেছেন, “remember that true love is worth waiting for!”
৯। পাউলো অ্যান্ড ফ্রান্সেসকাঃ
সত্য কাহিনী অবলম্বনে এই চরিত্র দুটি নেয়া হয়েছে বিশ্ব বিখ্যাত লেখক Dante-এর অমর সাহিত্য কর্ম হল “Divine Comedy” থেকে। ফ্রান্সেসকার স্বামী মালাটেস্তা ছিলেন একজন ভয়ানক অপরাধী। তাঁর ছোট ভাই পাউলোর সাথে মিলে ফ্রান্সেসকা Dante এর বই পড়ে সময় কাটাতেন। পরবর্তীতে দুজনের মধ্যে প্রেম জন্মে নেয়। ঘটনা জানাজানি হবার পর খুব স্বাভাবিক ভাবেই ফ্রান্সেসকার স্বামী দুজনকেই হত্যা করে।
১০। স্কারলেট ও’হারা অ্যান্ড রেথ বাটলারঃ
বলা হয়ে থাকে বিখ্যাত লেখক Margaret Mitchell এর কালজয়ী ক্লাসিক “Gone with the Wind,” হল ভালোবাসা বাসি মানুষের জন্য এক বাইবেল! সিভিল ওয়ারের পটভূমি নিয়ে, এবং স্কারলেট-বাটলারের বাঁধন হারা-উন্মাতাল প্রেম, মানসিক টানাপোড়ন, চাওয়া- পাওয়ার হিসেব, দেশের অস্থির সময়—এই সব কিছু মিলিয়েই এটি হয়ে উঠেছে অমর এক সাহিত্য কর্ম। উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্কারলেট কখনোই কারও বাঁধনে নিজেকে বাঁধতে নারাজ ছিল। কিন্তু বাটলারের উন্মত্ত প্রেমকে সে কখনোই উপেক্ষা করতে পারেনি। সুখী জীবনের চিন্তায় বিভোর স্কারলেটের সুখ বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। তাঁর মনস্তান্তিক দ্বন্দ্ব রয়েই গেল। আর তাইতো শেষে স্কারলেট বলেছিল, “Tomorrow is another day!”
১১। জেইন আয়ার অ্যান্ড এডওয়ার্ড রজেস্টারঃ
লেখক ‘’Charlotte Bronte” এর বিখ্যাত উপন্যাস “Jane Eyre” এর প্রধান চরিত্র জেইন ছিল এতিম এক মেয়ে, যে কিনা ব্যবসায়ী রজেস্টারের ঘর দেখভাল করার জন্য গভর্নেস হিসেবে আসে। বয়সে অনেক বড় আর প্রচণ্ড একা একটা মানুষ রজেস্টারের জীবনে জেইন যেন এক বসন্ত নিয়ে এসেছিল। বয়স কিংবা সামাজিক ব্যবধান কোন কিছুই তাঁদের প্রেমে বাঁধা হতে পারেনি। কিন্তু বিয়ের দিনে জেইন আবিষ্কার করে রজেস্টার পূর্ববিবাহিত। জেইন তাঁকে ছেড়ে চলে যায়। পরে জেইন জানতে পারে, রজেস্টার তাঁর অসুস্থ ও পাগল স্ত্রীর প্রতি কোন অবহেলা করেনি। শুধু তাঁকে হারাবার ভয়ে এই সত্যটা গোপন করেছিল। পরে যদিও ভয়াবহ এক অগ্নিকান্ডে রজেস্টার তাঁর বাড়ি, অসুস্থ স্ত্রী কে হারিয়ে ফেলেছিল। সে নিজেও তাঁর দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। অবশেষে দীর্ঘ বিরহের পর জেইন তাঁর কাছে ফিরে আসে। এই উপন্যাসের প্রতিটি বাক্য যেন এক একটি প্রেম প্রত্র!! প্রচণ্ড আবেগি সব লেখা পড়ে পাঠকের মন খুব সহজেই প্রবাবিত হয়।
১২। লায়লা এবং মজনুঃ
মধ্যযুগীয় ইরানী কবি “Nizami of Ganje” নামে যিনি পরিচিত, তিনি আরবীয় সামাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে রচনা করেন, “Layla and Majnun is a tragic tale about unattainable love.” প্রেমের ইতিহাসে, বিশেষ করে এই উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজে কালজয়ী হয়ে উঠে দুটি চরিত্র, লায়লা ও মজনু। স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক মানা হয় এই জুটিকে। বাল্যকাল থেকেই লায়লা আর মজনুর প্রেম গড়ে উঠে। কিন্তু দুজনের সামাজিক ব্যবধান বিপত্তি বাঁধাল। বলা আছে, লায়লার পিতা মজনুকে আহত করলে লায়লারও আহত হতো, এমননি ছিল তাঁদের সেই স্বর্গীয় প্রেম। মজনু কে মরুভূতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে বেদুঈনের দল মজনুর হার না মানা ভালোবাসা দেখে তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। তাঁরা লায়লার বাবাকে যুদ্ধে হারিয়ে দেয়। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে যায়। লায়লাকে তাঁর পিতা জোর করে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। স্বামী মারা যাবার পর, যদিও লায়লা মজনুর কাছে ফিরে আসে, কিন্তু প্রচণ্ড দুঃখ আর অনাহারে মজনু মারা যায়। লায়লাও তাঁর ভালোবাসা মজনুর পথ অনুসরণ করে। “দুই দেহ এক আত্মা,” নামক বহুল প্রচলিত কথা এই যুগলের অনুপ্রেরণায় পাওয়া।
১৩। লুইস অ্যান্ড বেলার্ডঃ
“A story of a monk and a nun,” যাদের চিঠিগুলোই সবচেয়ে বেশী বিখ্যাত। “লাভ লেটারস” বলে আমরা যে টার্ম টা ব্যবহার করি, তা এই যুগলের বদৌলতেই পাই। প্যারিসের বিখ্যাত নটরডেম স্কুলে পড়তে যায় পিটার বেলার্ড। তাঁর শিক্ষক বিখ্যাত দার্শনিক ফ্লোবার্ডের অনুরোধে, ভগ্নীকন্যা লুইসকে পড়াতে রাজী হয়। বেলার্ডের জ্ঞান, মেধা এবং বুদ্ধিমত্তার আকৃষ্ট হয়ে লুইস বেলার্ডের প্রেমে পড়ে যায়। তাঁরা গোপনে বিয়ের বাঁধনে আবদ্ধ হয় এবং লুইস গর্ভবতী হয়ে পড়ে। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ফ্লোবার্ড। তাঁর ভয়ে বেলার্ড, লুইসকে নিরাপদ জায়গায় রেখে আসে। কিন্তু এক রাতে ফ্লোবার্ডের অনুচররা ঘুমন্ত বেলার্ডের অঙ্গহানি করে। বেলার্ডের কষ্টে বাকী জীবন লুইস নান হিসেবে কাটিয়ে দেয়, এবং বেলার্ড হয়ে যায় একজন মঙ্ক (ধর্মীয় গুরু)! ইতিহাস হয়ে থাকে তাঁদের আত্মত্যাগ, আজও বিখ্যাত হয়ে আছে তাঁদের প্রেম পত্রগুলো।
১৪। রামোস অ্যান্ড থিইবীঃ
খুবই আবেগি আর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া আরেকটি রোমান প্রেম কাহিনী। বলা হয়ে থাকে, এই জুটি তাঁদের প্রেম দিয়ে প্রভু থেকে কথা নিয়ে রেখেছে যে, স্বর্গেও তাঁরা এক সাথে থাকবে! ব্যবিলনের সবচেয়ে সুন্দরী কুমারী থিইবীর বাল্যকালের বন্ধু ছিল সুপুরুষ রামোস। তাঁরা ছিল প্রতিবেশী। একই সাথে বেড়ে উঠতে গিয়ে একে অপরের প্রেমে পড়ে। কিন্তু তাঁদের পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নেয় না। তাই তাঁরা ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। সূর্যাস্তের সময় ঘর পার্শ্ববর্তী একটা ম্যালবেরী গাছের কাছে দুজনের দেখা করার কথা থাকে। থিইবী গোপনীয়তা রক্ষার্তে মুখে একটা কাপড় পরে (veil) রেমোসের জন্য গাছের নিচে অপেক্ষা করতে থাকে। হঠাৎ এক ক্ষুদার্ত সিংহ আসে থিইবীর কাছে। ভয় পেয়ে দৌড়ে অন্যজায়গায় আশ্রয় নেয়ার সময় তাঁর মুখের কাপড়টি খুলে পড়ে যায়। পরে রামোস এসে দেখে যে, সিংহের মুখে সেই কাপড়। সে ভাবে যে, সিংহ তাঁর থিইবীকে ভক্ষণ করেছে। সেও তাঁর ছুরি দিয়ে নিজের বুক কেটে ফেলে। অনেকক্ষণ পর থিইবী এসে মৃত রামোসকে দেখতে পায়। তারপর সেও সেই একই ছুরি দিয়ে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়।
১৫। ডার্সি অ্যান্ড এলিজাবেথঃ
বিখ্যাত ইংরেজ উপন্যাসিক Jane Austen এর কালজয়ী প্রেমের গল্প হল “Pride and Prejudice” এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হল তৎকালীন ইংরেজ ধনী সমাজের এক তরুণ ডার্সি। উচ্চ শিক্ষিত, প্রচণ্ড আহঙ্কারি, স্বভাবে নাকউঁচু, আর বংশমর্যাদায় গর্বিত এই ডার্সি, ঘটনাচক্রে এবং নানা নাটকীটার মাঝে সাধারণ-মধ্যবিত্ত এক পরিবারের মেয়ে এলিজাবেথের সাথে পরিচয় হয়। এলিজাবেথ ছিল মিঃ অ্যান্ড মিসেস বেনেটের পাঁচটি মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। মিঃ অ্যান্ড মিসেস বেনেট সবসময় তাঁদের মেয়েদের প্রচণ্ড স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। নাকউঁচু ডার্সি সবসময় এলিজাবেথ কে তাঁদের সামাজিক এবং পারিবারিক অবস্থান নিয়ে ব্যাঙ্গ, অপমান করতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে এলিজাবেথের রূপ ও গুণে মুগ্ধ হয়ে সেটা ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ডার্সির অভিজাত পরিবার তা মেনে নেয় না, ওদিকে এলিজাবেথের পরিবারেরও ঘটতে থাকে নানা অঘটন। অবশেষে নানা নাটকীয়তার পরে ডার্সি- এলিজাবেথের মিলন হয়। নানা নাটকীয়তা, হাস্যরসে ভরা, তৎকালীন ইংরেজ সমাজের হরেক রকম দিক, লেখকের চমৎকার বর্ণনায় এই উপন্যাসটি হয়ে উঠেছে ইংরেজি সাহিত্যের অমর এক সৃষ্টি।
১৬। সেলিম এবং আনারকলিঃ
মোঘল সম্রাট আকবর পুত্র সেলিম আর রাজ্যের নর্তকী অনিন্দ্য সুন্দরী আনারকলির প্রেম সম্পর্কে আমরা সবাই-ই জানি। প্রেমের জন্য এত বড় আত্মত্যাগ এই উপমহাদেশে আর কেউ দেখেনি। সম্রাট আকবর এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নেন নি। কিন্তু সেলিম ও দমবার পাত্র নয়। আনারকলিকে পাবার জন্য নিজ পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু শক্তিশালী আকবর বাহিনীর কাছে সেলিম খুব সহজেই পরাজিত হয়। নিজ সন্তানের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেন আকবর। সেলিম কে বাঁচাতে আনারকলি তাঁর হার স্বীকার করেন, এবং নিজের জীবনের বিনিময়ে সেলিমের জীবন ভিক্ষা চান। অবশেষে, সেলিমের চোখের সামনেই আনারকলিকে জীবন্ত কবর দেয়া হয়!!
১৭। পকাহন্টাস অ্যান্ড জন স্মীথঃ
ভারতীয় পাঠান রাজা পউহাতান ছিলেন আমেরিকার ভার্জিয়ানা অঙ্গরাজ্যের এলগনকুইন ইন্ডিয়ানস নামক সেনাদলের সদস্য। তাঁর কন্যা পকাহন্টাস প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে যায় আমেরিকান এক ছেলের- নাম জন স্মীথ। পকাহন্টাস তাঁর বাবার সৈন্যদলের হাত থেকে রক্ষা করে স্মীথ কে। সেই কৃতজ্ঞতা বোধ থেকেই এই প্রেমের শুরু। পরে তাঁরা একে অপরকে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে নানাভাবে সাহায্য করে। দু পরিবারের মদ্ধেও সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু এক যুদ্ধে গানপাউডার দ্বারা আহত হয়ে স্মীথ যখন আমেরিকা ছেড়ে ইংল্যান্ডে চলে আসে, তখন পকাহন্টাসকে মিথ্যে বলা হয়, স্মীথ মারা গেছে! সাথে পকাহন্টাস কে গ্রেফতার করা হয়, তাঁর পিতার সৈন্যদলকে কাবু করার জন্য। অনেক বছর বন্দী থাকার পর, অনেক চড়াই উৎরিয়ে পকাহন্টাস খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে, এবং নাম পাল্টে রাখে “রেবেকা” (Rebecca)। ইতিমধ্যে সে জন রলফ নামে একজন কে বিয়ে করে। এবং প্রায় ৮ বছর পর লন্ডনে এসে রেবেকা জানতে পারে স্মীথ বেঁচে আছে। কাকতালীয় ভাবে দেখা হওয়া- ওটাই তাঁদের শেষ দেখা।
১৮। শাহজাহান এবং মুমতাজঃ
১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে আরজুমান বানু নামক এক বালিকার সাথে ১৫ বছরের শাহজাহা্নের বিয়ে হয়। পরে যিনি কিনা মোঘল সাম্রাজ্য পরিচালনা করেন। শাহজাহান তাঁর ১৪ সন্তানের মাতা এবং প্রিয় স্ত্রীর নাম পাল্টে রাখেন মুমতাজ মহল। ১৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে মুমতাজের মৃত্যুর পর, স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি স্থাপত্য নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন। যাতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেছিল, প্রায় ১ হাজার হাতী ব্যবহার করা হয়েছিল, এবং প্রায় ২০ বছর লেগেছিল সেই স্থাপত্য নির্মাণ শেষ হতে। যদিও সেই অনিন্দ্য সুন্দর কালো মার্বেল পাথরের সৌন্দর্য তিনি সম্পূর্ণ দেখে যেতে পারেননি। নিজ পুত্র দ্বারা তিনি লাল আগ্রা ফোর্ট তিনি বন্দী ছিলেন অনেকদিন। যমুনাতীরে যেখানে “তাজমল” গড়ে ওঠেছিল, শেষ জীবনে শাহজাহান ওখানে একাকী সময় পার করেছেন। মৃত্যুর পর তাঁকে সেখানে সমাহিত করা হয়। তাঁর ভালোবাসার নিদর্শনে তিনি রেখে যান, পৃথিবীর সপ্তাচার্যের মাঝে একটি “তাজমল!”
১৯। মেরি অ্যান্ড পিয়েরি কুরীঃ
এই জুটির ছিলনা কোন লোকদেখানো, বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ। ছিল না কোন পুরাণিক ট্র্যাজেডি, দ্বন্দ্ব, যুদ্ধ, দেবদেবীর হস্তক্ষেপ, কিংবা ছিলনা কোন অবৈধ কাহিনী। আধুনিক আর দশটা মানুষের মতোই ছিল তাঁদের প্রেম কাহিনী। কিন্তু ছিল বিশ্বাস, এঁরা ছিলেন একে অপরের অনুপ্রেরণা! মানবতার কল্যাণে আর কাজের মধ্যেই এগিয়েছে তাঁদের প্রেম। তৎকালীন পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় নারীদের রিসার্চে অনুমতি দেয় নি বলে, ১৮৯১ সালে রিসার্চ করতে মেরী গিয়েছিলেন ফ্রান্সের সর্বরনে। মেধাবী মেরী কে লাইব্রেরী, ল্যাবরোটারি সবখানেই আবিষ্কার করেন আরেক মেধাবী, মেরীর ল্যাবরোটারি ডিরেক্টর পিয়েরি কুরী। কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর, ১৮৯৫ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। ১৮৯৮ সালে এই বৈজ্ঞানিক যুগল আবিষ্কার করেন পলোনিয়াম আর রেডিয়াম। পদার্থ বিদ্যায় এবং রেডিও-আক্টইভিটিতে অবদানের জন্য এই দম্পতি ১৯০৩ সালে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। ১৯০৪ সালে পিয়েরি কুরী মারা যাবার পর মেরী নিজের স্বামীর দেশেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নেন এবং কুরীর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। অবশেষে ১৯১১ সালে মেরী কুরী পৃথিবীর একমাত্র নারী যিনি দ্বিতীয়বারের মতো এবং ভিন্ন বিষয়ে নোবেল অর্জন করেন। এবার তাঁর বিষয় ছিল কেমিস্ট্রি! ১৯৩৪ সালে লিওকিমিইয়ায় মারা যাবার আগ পর্যন্ত স্বামী পিয়েরি কুরীর বিভিন্ন রিসার্চ তিনি চালিয়ে যান।
২০। কুইন ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড প্রিন্স আলবার্টঃ
হাজার বছরের পুরানো ইংরেজ সিংহাসন, আর তাঁদের হাজার হাজার প্রেম কাহিনীর ভিড়ে বলা হয়ে থাকে কুইন ভিক্টোরিয়া আর প্রিন্স আলবার্টের প্রেম কাহিনী অতুলনীয়। কুইন ভিক্টোরিয়া তাঁর স্বামী প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুর পর প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত তাঁর জন্য শোক করেছেন। ভিক্টোরিয়া তাঁর চাচা king William- iv এর মৃত্যুর পর ১৮৩৭ সালে ইংরেজ সিংহাসনের দায়িত্ব নেন। ১৮৪০ সালে কুইন ভিক্টোরিয়া তাঁর ফার্স্ট কাজিন প্রিন্স আলবার্ট কে বিয়ে করেন। প্রিন্স আলবার্ট ছিলেন জার্মান সংস্কৃতিমনা এক উদার, প্রাণোচ্ছল মানুষ। অনেকের অনেক কটু কথায় কান না দিয়ে তাঁরা সুখী একটা পরিবার গঠন করেছিলেন। তাঁরা একে অপরকে প্রচণ্ড ভালবাসতেন। তাঁদের ছিল ৯ জন সন্তান। ১৮৬১ সালে স্বামী আলবার্ট মারা যাবার পর, তিনবছর পর্যন্ত কুইন ভিক্টোরিয়া জনগণের সামনে আসেননি। পরে জনগণের চাপে এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন দিস্রাইলের নেতৃত্বে ১৬৮৮ তে নতুন পার্লামেন্ট ঘোষণা করেন। ১৯০১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, তিনি যেখানেই যেতেন, কালো কাপড় পরে যেতেন। ব্যক্তিগত শোককে শক্তিতে পরিণত করে, কুইন ভিক্টোরিয়ার শাসনামলই ছিল ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শাসনামল। ব্রিটিশ এই রাজত্বকে তখন থেকেই বলা হয়, “the sun never set.”
___________________________________________________
তথ্য ও ছবিঃ উইকি ও ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট। সেই সাথে সাহিত্যের ছাত্রী হবার সুবিধায় নিজের অল্পস্বল্প জ্ঞান!!
বাছাইপ্রক্রিয়াঃ ইন্টারনেট থেকে পাওয়া এই বিশটি যুগল নির্বাচিত করা হয়েছে মূলত প্রাচীন এবং ইতিহাসে অপেক্ষাকৃত যারা আগে এসেছেন সেই ভিত্তিতে। তারপর দেখা হয়েছে, কাদের ঘটনা বহুলপ্রচলিত এবং বিশ্বের বেশীরভাগ মানুষ জানেন এমন সব কাহিনী। এমন নয় যে, ভালোবাসায় আর কেও বিখ্যাত হন নি।
আরও অনেক কাহিনী, হাজারো সাহিত্যকর্ম যেমনঃ শেক্সপিয়ারের আরেকটি অসাধারণ ট্র্যাজিক সাহিত্য ওথেলো-দেসদিমোনা চরিত্র, পার্সিয়ান বিখ্যাত প্রেম কাহিনী শিরি-ফরহাদ, , রামায়ণের রাম-সীতা, শরৎচন্দ্রের দেবদাস-পার্বতী, রবীন্দ্র ঠাকুরের "শেষের কবিতা" র অমিত-লাবণ্য চরিত্রের কথা পৃথিবীর সব বাঙালীর প্রিয়, ইংরেজ রাজা Edward-viii মিসেস ওয়ালিসের প্রেমে পড়ে রাজত্ব ত্যাগের কাহিনী, Emily Bronte এর বিখ্যাত উপন্যাস “Wuthering Heights” এর হেথক্লিফ-ক্যাথরিন জুটি, সহ আরও অনেক অনেক বিখ্যাত কাহিনী ও সাহিত্য কর্ম আছে, সেগুলোর মূলমন্ত্র ছিল- ভালোবাসা। যতদিন পৃথিবী থাকবে, ভালোবাসার জন্য যাঁদের আত্মত্যাগ সবাই স্মরণ করবে।
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রেমের তাঁরাই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন,কিংবা বিখ্যাত আর ঐতিহাসিক সাহিত্যকর্মের বেশীরভাগ কাহিনীতেই আছে ভালোবাসার জন্য ত্যাগ, কষ্ট, অপেক্ষা আর সেক্রিফাইস!! আবারো সেই পুরানো বিতর্ক সামনে চলে আসেঃ প্রেমের সার্থকতা কিসে? মিলনে নাকি বিরহে?
যাক, বিতর্কে না যাই। আসলে প্রতিটি মানুষের প্রেমই তার নিজের কাছে বিখ্যাত, বিশেষ কিছু। প্রেম-ভালবাসা, বিরহ-কষ্ট এগুলোর কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা হয় না। ব্যক্তি বিশেষে এগুলোরও তারতম্য ঘটে। তাইতো পৃথিবীর আদি এই রূপটা নিয়ে আজও মানুষের মাতামাতি। ভালোবাসা-বাসির সাথে জড়িত প্রতিটি মানুষের জন্য শুভেচ্ছা।
(সংগৃহিত)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন